দুর্গা প্রতীমা |
শরৎকালের পূজায় ষষ্ঠিতে বেলগাছের নীচে দেবীর বোধন হয় । পুরাণ অনুসারে দেব-দেবীরা ছ'মাস জাগ্রত থাকেন, আর ছ'মাস থাকেন নিদ্রামগ্ন (দেবতাদের ছ'মাসে একদিন এবং ছ'মাসে এক রাত্রি ) । সাধারণতঃ আষাঢ় মাস থেকে অগ্রায়ন মাস -এই সময়টা হচ্ছে দক্ষিণায়ণ, দেব-দেবীরা থাকেন নীদ্রামগ্ন । এই সময় পিতৃগণের পূজা-শ্রাদ্ধ-তর্পন করা বিধেয়, কিন্তু দেব-দেবীর পূজা সিদ্ধ নয় । শ্রীরামচন্দ্র দক্ষিণায়ণে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন বলেই তাকে অকেলবোধন করতে হয়েছিল । অথাৎ নিদ্রিত দেবীকে জাগিয়ে নিতে হয়েছিল । এখনও সেই প্রথাই প্রচলিত । আশ্বিন মাসে শুক্ল পক্ষের দুর্গাষষ্ঠিতে বেল গাছের নীচে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস করতে হয় । তার পর সপ্তমি থেকে দশমি পর্যন্ত মহাধূমধামে দেবীর পূজো হয় ।
দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে দেবতা ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করেন এবং শরণাগত ভক্তকে সিদ্ধি, বল, বিদ্যা ও সমৃদ্ধি ইত্যাদি দান করেন । সেই কারণেই দেবীর সঙ্গে সিদ্ধি, বল, বিদ্যা, সমৃদ্ধির প্রতিক হিসাবে গণেস, কার্ত্তিক, সরস্বতী ও লক্ষ্মীকে দেখতে পাই । আবার বলা হয়, প্রতিনিয়ত মানুষ নিজের অন্তরেই অশুভ শক্তি, তথা অসুরের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে । মা দুর্গা হচ্ছে শুভ শক্তির প্রতীক । তাই মা দুর্গার হাতে অসুর বিনাশের অর্থ মানুষের অন্তর থেকে লোভ, কাম, হিংসা ইত্যাদি অসুভ শক্তির বিনাশ । তারই পরিণামে মানুষ শুভ শক্তির প্রতীক হিসাবে সিদ্ধি, বল, বিদ্যা ও সমৃদ্ধির আরাধনা করে ।
শারদীয় শুভেচ্ছা |
তবে বাঙালি যেভাবে দুর্গা পূজাকে আত্মস্থ, তথা জীবনের অঙাগ হিসাবে গ্রহণ করেছে, তেমন ভাবে আর কেই করতে পারেনি । মাতৃরূপে বা শক্তিরূপে মা দুর্গা যেমন বাঙালির অন্তর জুড়ে বিরাজ করছেন, তেমনি কন্যারূপে উমা বাঙালির সংসারে এক অভূতপূর্ব আবেগের সঞ্চার করেছে । কথিত আছে, গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর স্ত্রী মেনকা কন্যা উমা বা পার্বতীকে বিয়ের পর কৈলাসে শিবের ঘরে পাঠিয়েছিলেন । বৎসারান্তরে সেই কন্যাকে দেখার জন্য মা মেনকার ব্যাকুল প্রার্থনা যেন প্রতিটি বাঙালি পরিবারের সর্বজনীন প্রার্থনায় পরিণত । ঘরের মেয়ে ঘরে আসবে – তাই বাঙালির ঘরে ঘরে দেখা দেয় আনন্দের শিহরণ । আমাদের এই দুঃখ-দৈন্যের ঘরে শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়ে আসবে মাত্র চার দিনের জন্য –তাই আর সমস্ত দুঃখ ভুলে ঘরে ঘরে আনন্দের পসরা সাজায়,নতুন জামা কাপড় পরে দুঃখকে বিদায় দিয়ে আনন্দময় হয়ে উঠে বাংলার আকাশ-বাতাস । এভাবে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে সামাজিক উৎসবে পরিণত করার ঘটনা পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যাবে না । বাঙালির আগমনী সঙ্গীত আমাদের জীবনপ্রবাহে মিশে যাওয়া এক অবিচ্ছেদ্য ধারা ।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comments. Please visit again.