Rakhi |
শ্রাবণের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় রাখীবন্ধনের
অনুষ্ঠান । এই রাখী বন্ধনের প্রথম সূচনা কবে,তা' আজ আর জানার উপায় নেই । এ নিয়ে
নানা মুনির নানা মত । তবে পৌরানিক
এক কাহিনী থেকে জানা য়ায়, দেবতা ও অসুরদের সংগ্রামে দেবতারা পরাজিত
হলে, দেবরাজ ইন্দ্র জয়লাভের পথ খুঁজতে দেবগুরু বৃহস্পতির কাছে
যখন যাচ্ছিলেন, সেইসময় ইন্দ্রের পত্নী ইন্দ্রানী দেবরাজকে বললেন,
তিনি জানেন কি উপায়ে অসুরদের পরাজিত করা য়ায় । আর সেই
উপায় হিসাবে পরদিন শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমাতে ইন্দ্রানী স্বামীর হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন 'রক্ষাকবচ '। এবার ইন্দ্র
অসুরদের পরাজিত করতে সমর্থ হলেন । এই রক্ষাকবচটি
ছিল একটি 'রাখী '। পৌরানিক
কাহিনীতে স্ত্রী স্বামীর হাতে রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন । পরবর্তীকালে
রীতির পরিবর্তন হয়, এবং সাধারণতঃ বোনেরা ভাইদের হাতে রাখী
বেঁধে দেয়, বা প্রিয়জন ।
Rakhi Bandhan |
বাংলায় (আমাদের রাজ্যে ) রাখীবন্ধন বা রক্ষাবন্ধন তেমন কোনও প্রাচীনতার দাবিদার নয় । বরং বলা
য়ায়, এই উৎসবটা উত্তভারত বা উত্তর পশ্চিম ভারতেই জনপ্রিয় ছিল । এটা একই
সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব । কেউ কেউ
বলেন, আর্যদের প্রভাবেই এই বঙ্গে রক্ষাবন্ধন প্রচলিত হতে শুরু করে এবং পরবর্তীকালে
। অবাঙালী ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের আগমন
ও বঙ্গভূমিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের ফলে তাদের দেখাদেখি রাখীবন্ধন এই বাংলায় জনপ্রিয় হতে
থাকে । এমন একটা সময় ছিল, যখন আমাদের দেশের পুরোহিত প্রধানরা তাঁদের শত শত শিষ্যের হাতে রাখী পরিয়ে দিতেন
। পুরাণ কাহিনী থেকে জানতে পারি, শ্রীকৃষ্ণের কল্যান-কামনায় মা যশোদা, রাখীপূর্ণিমার দিন
পুত্রের হাতে রাখী পরিয়ে দিতেন । প্রাচীনকাল
থেকেই নারীরাই পুরুষের হাতে রাখী পরিয়ে দিয়ে আসছেন । বোন ভাইকে
রাখী পরায়, অথবা ভাই ভেবে বরণ করে নিতে চায়,
এমন কাউকেই রাখীর বন্ধনে জড়িয়ে নেয় ।
Rakhi Bandhan |
এই বঙ্গে
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলনে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ রাখীবন্ধন উৎসবকে জাতীয় ঐক্যবন্ধনের
হাতিয়ার করে তুলেছিলেন । এখনও রাজনৈতিক
আন্দোলনের অঙ্গ হিসাবে রাখীকে কাজে লাগানো হয় । তবে ভারতের
বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার
বিষাক্ত পরিবেশে রাখীবন্ধন একটা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে নিয়ে এসেছে । জাত-পাত
ও ধর্মের গন্ডি ভেঙ্গে এই রাখী বন্ধন আমাদের
ক্ষত-বিক্ষত অস্তিত্বকে এক নতুন দিগন্তে পৌছে দিক, এক ভালেবাসা ও বিশ্বাসের বন্ধনে বেঁধে দিক----- এটাই জাতীয় প্রার্থনা হোক ।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comments. Please visit again.