রাধা-কৃষ্ণের ঝুলন |
বাংলার
অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে বৈষ্ণনদের অবশ্য পালনীয়
অনুষ্ঠান
হল ঝুলন ঊৎসব । শ্রাবন
মাসের শুক্লা একাদশী
থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত পাঁচদিন ধরে এই আনুষ্ঠান পালন করা হয় । এর
সংস্কৃত নাম হিন্দোল ।
রাধা-কৃষ্ণ
বা অন্য বৈষ্ণব বিগ্রহ দোলায় স্থাপন করে দোল দেওয়া এই অনুষ্ঠানের প্রধান অঙ্গ । এই
উৎসবটি এখন রীতিমত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
বর্তমানে
শুধু বৈষ্ণব ভক্তরা নন, বা রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরে
নয়, পাড়ায়-পাড়ায় ছোটছোট ছেলেমেয়েরাও ঝুলন নিয়ে মেতে ওঠে ।
রাধাকৃষ্ণের
লীলাক্ষেত্র শ্রীবৃন্দাবন ধামে খুলন উৎসব উপলক্ষে রাধাষ্টমী পর্যন্ত এক মাসব্যাপীমেলা
আয়োজিত হয় । পুরীধামে
একদিন আগে থেকে, অর্থাত দশমী থেকে সপ্তাহব্যাপী ঝুলন
উৎসব পালিত হয় ।
বঙ্গীয়
নিম্বার্ক আশ্রম, কাঠিয়া বাবার মঠ,
বজবজের শ্রীগুরু প্রপন্ন আশ্রম, নদীয়া জেলার পালপাড়ায়
মহেশ পন্ডিতেরশ্রীপাটে মহাধুমধামে পালিত হয় এই উৎসব ।
শ্রীকৃষ্ণ
আবির্ভাবের একমাস বা একপক্ষ কাল মধ্যে শ্রীরাধার আবির্ভাব । রাধা
হরেজন বৃষভানুর কন্যা এবং আয়ন ঘোষের পত্নী ।
মজার
কথা হল,
মহাভারতে আমরা শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণ বিবরণ পাই, কিন্তু
সেখানে রাধা নামের কোনও চরিত্রের দেখা পাই না । এমনকি
শ্রীমদ্ভাগবতে রাধার কোনওরূপ উল্লেখ পাই না । শুধু
পাই কৃষ্ণ প্রেমিকা এক সখীর উল্লেখ ।
তাহলে
রাধা এলেন কিভাবে ? পরবর্তীকালে ব্রহ্মকৈবর্তপুরানে,
দেবী ভাগবত ও পদ্মপুরানে রাধাকে পাই নানারূপে । 'রা' অর্থে লাভ করা, অর্থাৎ মুক্তিলাভ করা এবং 'ধা' অর্ধে ধাবমান হওয়া, শ্রীহরির
পদে ধাবমান হওয়া ।
রাধা
নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই, তবু বলা য়ায়, রাধাকৃষ্ণলীলা ভারতীয় তথা বাঙালী ধর্মজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । ' ঞ্জান ' ব্যতিরেকে 'ভক্তির ' সাহায্যে ভগবানের
সান্নিধ্য পাওয়া য়ায় - রাধা ও গোপীদের লীলাবৃত জীবনের এটাই মূলসূত্র । অবশ্য
পরবর্তীকালে বৈষ্ণব কবিদেরস কাব্য মহিমায় এই আধ্যাত্মিক চেতনা শেষ পর্যন্ত পরকীয়া প্রেমের
দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে এবং রাধা-কৃষ্ণের প্রেম নিছকই মানবিক সম্পের রূপ নেয় । ফলে
জনজীবনে ও সমাজচেতনায় দেখা দেয় বিকৃতি ।
রাধা-কৃষ্ণের
ঝুলন যাত্রা শুধু বৈষ্ণব কবিদেরই নয় বাংলার কাব্য-সাহিত্যকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে
। এমনকি
প্রভাবিত করেছে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকেও । আসলে
উৎসবের প্রধান লক্ষ্য আনন্দলাভ, শুধু আচার-বিচারের
জটিলতা নয় । সেদিক
থেকে ঝুলন উৎসব আচার-বিচারের সীমানা ডিঙিয়ে সরাসরি আজ লোক উৎসবের আঙিনায় এসে সগৌরবে
নিজের স্থান করে নিয়েছে ।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comments. Please visit again.