বাংলার লোকসঙ্গীত/Bengali Folk song
|
বাংলার বাউল গান |
প্রাচীনকাল হইতে আরম্ভ করিয়া আধুনিকতম কাল
পর্যন্ত বাঙালীর সাধনার শ্রেষ্ঠ সম্পদই তাঁহার সঙ্গীত । তাই
বলা য়ায় বাংলাকে গানের মধ্যদিয়ে যত সহজে জানা য়ায, অন্য কোনো বিষয়ের মধ্যদিয়ে তত সহজ নহে । বাঙালীর
ধ্যানধারণা, সামাজিক আচার-আচরণ, ব্যাক্তি ও গোষ্ঠীজীবনের সুখ-দুঃখের অনুভূতি সবই সঙ্গীত সাধনায় যে বৈচিত্র্য
প্রকাশ পাইয়াছে, তাহার সঙ্গে পরিচয় করিতে না পারলে বাঙালীর চরিত্র
এবং তাহার জাতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যাইবে না । বস্তুত
বঙ্গীয় সংস্কৃতির প্রাণ হল সঙ্গীত ।
বাংলা
সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাগীতি ।
বাংলা
সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথের মুখ্য পরিচয় তিনি একজন গীতিকবি । বাংলার
গীতি সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত,
জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, বিদ্যাপতি,
দ্বিজেন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ,
রজনীকান্তের সৃষ্টিতে । শুধু
পরিশীলিত সঙ্গীতই নয়, লোকসঙ্গীতেও আমাদের সমৃদ্ধি
ও বৈচিত্র্য নেহাৎ কম নয় ।
জীবনের
এমন কোনো পর্যায় নেই, যা নাকি আমাদের লোকসঙ্গীতে
ধরা পড়ে নি ।
লোকসঙ্গীতের
নিরিখে বাংলাদেশ চারটি স্পষ্ট বিভাগে বিভক্ত - পশ্চিমাঞ্চল,
উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল ।
পশ্চিমাঞ্চলের
অন্তর্গত মেদিনীপুর,বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম ।
উত্তরাঞ্চলের
অন্তর্গত মালদহ, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি,
কোচবিহার ও রংপুর ।
পূর্ব
ময়মনসিংহ,
পশ্চিম শ্রীহট্ট, উত্তর ত্রিপুরা নিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চল
। আর
দক্ষিন পূর্বাঞ্চলভুক্ত হল নোয়াখালি ও চট্টগ্রাম । প্রসঙ্গত
উল্লেখ যে রাজনৈতিক কারণে যে বিভাজনই ঘটে থাকুক, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সেই বিভাজন গুরুত্বহীন ।
|
বাংলার লোকসঙ্গীত |
পশ্চিম
বাঁকুড়া,পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ বীরভূমে সমগ্র ভাদ্রমাস ব্যাপী
গীত হয় ভাদু গান । ভদ্রেশ্বরীকে
পঞ্চকোট রাজার কন্যা কল্পনা করে তাকে নিয়ে কিংবদন্তী রচিত হয়েছে । অনূঢ়া ভাদুর
নাকি মৃত্যু হয়েছিল । মূলত অনূঢ়া
কন্যারাই ভাদুপূজার আয়োজন করে । এই পূজার
মূখ্য উপাচার ভাদুসঙ্গীত । সমগ্র পৌষ
মাস ব্যাপী পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর,
হুগলির কিয়দাংশে, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম প্রভৃতি অঞ্চলে টুসু পূজা উপলক্ষে গীত হয় টুসু সঙ্গীত । টুসুকে
ঘরের মেয়ে রূপেই বিবেচনা করা হয়, তাঁর আহ্বানে গাওয়া হয় টুসু সঙ্গীত । পুরুলিয়া
জেলার ঝুমুর শ্রোতাকে আবিষ্ট করে তার সুরের মাদকতায় । মালদহে
শোনা য়ায় গম্ভীরা । গম্ভীরা
লোকনাট্য রূপেও পরিচিত । গম্ভীরা
গান রচিত হয় শিবকে উপজীব্য করে । তাই বলে
এই গান কোনোভাবেই আধ্যাত্মিক সঙ্গীত নয় । মুর্শিদাবাদের
আলকাপ, নদীয়ার বোলান, অষ্টক, কোচবিহারের
কুশান গান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গাজীর গান, উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া, পূর্ববঙ্গের ভাটিয়ালি আমাদের লোকসঙ্গীতকে
সমৃদ্ধ করেছে । ভাওয়াইয়া
রাজবংশী ভাষায় রচিত, এই গানে সহায়তা নেওয়া হয় দোতারার । শিল্পীর
গলা ভাঙ্গা এ গানের বৈশিষ্ট্য । কুশান গানে
বাজে ব্যানা । পূর্ববঙ্গের ভাটিয়ালিকে অনেকে লোকসঙ্গীতের
শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দিতে চান । উদাত্ত
কণ্ঠে যখন শোনা য়ায -----------"মন মাজি তোর বৈঠা নেরে / আমি আর বাইতে পরলাম না
।"
তখন সহজেই তা শ্রোতার অন্তরকে স্পর্শ করে । বীরভূমের
বাউল গান লোকসঙ্গীত হিসেবে বিশিষ্ট । সহজ ভাষায়
গভীর তত্ত্বকথা প্রকাশিত হয় এই গানে । সঙ্গে বাজে
একতারা, আনন্দলহরী । গানের আরো
প্রকার ভেদ আছে । কর্ম উপলক্ষেগীত হয় কর্মসঙ্গীত, বিভিন্ন লোকধর্মাচারণের সঙ্গে গীত হয় ধর্মিয় গীতি যেমন -সাহেবধনী, কর্তাভজা, বলাহাড়ী ইত্যাদি । তাছাড়া
রয়েছে আখ্যান ভিত্তিক সঙ্গীত গীতিকা মহুয়া, মলুয়া, দস্যু কেনা রামের পালা, রূপবতী, চন্দ্রাবতী ইত্যাদি । এসব গীতিকা
গাওয়া হয় ভাটিয়ালি সুরে । আখ্যানগুল
নাটকীয় এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন ।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comments. Please visit again.