Kazi Nazrul Islam (1898-1976) |
সমকালীন রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশীদার হিসাবে তাঁর ভাগ্যে কারাবাসও ঘটেছিল । তাঁর জীবন অভিজ্ঞতা বিচিত্র । এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা সমুদ্রমন্থনের কাজ করে ছিল । একদিকে দেশের স্বাধীনতা চেতনার সংগ্রাম, অপর দিকে পৃথিবীর শোষক-শোষিতের পাশব চিত্র - এই দুইয়ে মিলে কবিকে সাম্যবাদী করে তুলেছিল । প্রথম জীবনে মোহিতলাল মজুমদারের কাব্যসুরের সঙ্গে সামান্য মিল পাওয়া গেলেও নজরুলের প্রতিষ্ঠিত কবি হয়ে উঠতে বিলম্ব লাগল না । কেবল মাত্র তাঁর গজলগুলিতে মোহিতলালের প্রভাব স্থায়ী হয়েছিল । নজরুল কল্লেলে (পত্রিকা ) যোগদান করার পর পত্রিকাটির পালাবদল ঘটে । এই হিসাবে রবীন্দ্র-উত্তরণ প্রচেষ্টারত কবিসম্প্রদায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেলেন নজরুলের কাছ থেকে ।নজরুলের অপর এক শ্রেণীর কাব্যে হৃদয়বৃত্তির সূক্ষ্ম কোমল দিকগুলির প্রতিফলন হয়েছে । তাঁর শ্যামা-সঙ্গীত এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য । প্রেমও তাঁর কাব্যে যথেষ্ট সমাদর পেয়েছে । একদিকে সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, ঘৃণা ও ক্রোধ, অপর দিকে অন্তরের রোমান্টিক কবিচেতনার জীবন ও জগতের প্রতি অসীম ভালোবাসা -নজরুলের কাব্যধর্মের এইখানেই শ্রেষ্ঠত্ব । শব্দ চয়নে তিনি পরিচিত কোন ভাষাকেই দূরে রিখেন নি । আরবী-ফরাসী-হিন্দি ব্যবহার যেমন অজস্র রয়েছে তেমনি তৎসম শব্দের ব্যবহারেও কবি বিমুখ নন । তাঁর কাব্যে ছন্দের চটুলতা একডি বিশিষ্ট গুণ । সব মিলিয়ে ভাষা-ছন্দ-সুর কবির অনুভূতিকে মসৃণ গতিতে প্রবাহিত করেছে । নজরুল একই সঙ্গে বিদ্রোহী কবি-ভক্তি কবি- প্রেমিক কবি । নজরুলের কাব্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-- 'অগ্নিবীণা', 'দোলন চাঁপা ', 'বিষের বাঁশি ', 'ছায়ানট ', 'ভাঙার গান', 'সর্বহারা', 'ফণিমনসা ', 'সিন্ধুহিন্দোল ' প্রভৃতি ।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comments. Please visit again.