Jatindranath Sengupta (1887-1954) |
পৃথিবিকে আমরা ভালবাসি,
আত্মীয় বলে মনে করি, কিন্তু কেউ কেউ তা পারে না
। পৃথিবীতে
সবই আছে -এতো আলো, এতো আনন্দ, এত দুঃখ, এত সুখ কিন্তু এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি
? আমাকে যেদিন চলে যেতে হবে, তার পরের দিন কি কলিকাতায়
ট্রাম চলবে না কিংবা আমার বারান্দার টবের গাছটিতে একটি ফুল ফুটবে না ? জানি না এইটুকু মাত্রই এঁদের অনুভূতি কিনা । কিন্তু
এই আত্মসমাহিত ব্যক্তি প্রিয়ার প্রেম, পুত্রের
আলিঙ্গনকেও অন্তরে আসন দিতে পারেন না । বাংলা
সাহিত্যে দু'জন কবিকে পাই যাঁদের সম্পর্কে অনেক কথা
বললেও কিছুই বলা হয় না ।
মনে
হয় তাঁরা যেন আমাদের কথার অন্তরালে মৃদু মৃদু হাসছেন । এঁদের
প্রথমে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এবং পরে জীবনানন্দ
দাশ । একমাত্র ইউরোপীয় কবি T. S. Eliot - এর সঙ্গেই
এঁদের সগোত্র-আত্মীয়তা ।
সৃষ্টির সুখে মহা
খুসি যারা, তারা নর নহে , জড় ;
যারা চিরদিন কেঁদে
কাটাইল তারাই শ্রেষ্ঠতর ।
মিথ্যা প্রকৃতি, মিছে আনন্দ, মিথ্যা রঙিন সুখ ;
সত্য সত্য সহস্র
গুণ সত্য জীবনের সুখ !
সত্য সুখের আগুনে, বন্ধু, পরাণ যখন জ্বলে,
তোমার হাতের সুখ-দুখ
দান ফিরায়ে দিলেও চলে ।
যতিন্দ্রনাথকে
কি তবে নাস্তিক্যবাদী বলবেন, কেউ কেউ তাঁকে
নৈরাশ্যবাদীও বলতে চান । এ আসলে নৈরাশ্য বা নাস্তিক্য নয়, কবির এ এক দুর্জয় অভিমান । জগৎ, জীবন, প্রেম, প্রকৃতির মধুভাণ্ড সকলই তো একটা প্রচণ্ড ফাঁকি । অবশ্য ইহাদের অস্তিত্ব আছে কিন্তু কবির কাছে সবই মোহ - একটা ছলনা ছাড়া আর কি ? বঞ্চনার বিশ্বে শুষ্ককণ্ঠে চলতে চলতে সামান্য কয়বিন্দু পানীয় সংগ্রহ করে কতটুকু
পিপাসা মিটতে পারে ।
চেরাপুঞ্জীর থেকে
একখানি মেঘ ধার
দিতে পার গোবি-সাহারার বুকে ?
একেবারেই সম্ভব
নয় । বিশ্ব 'চেরাপুঞ্জী 'ই থাকবে আর আমি 'গোবিসাহারা 'র পিপাসা নিয়ে থাকব । সুতরাং এই কুহক অবলম্বন করে কবি চলতে পারে না ।
কে গাবে নূতন গীতা
-
কে ঘুচাবে এই সুখ-সন্ন্যাস
-গেরুয়ার বিলাসিতা ?
কোথা সে অগ্নিবাণী
-
জ্বালিয়া সত্য, দেখিবে দুখের নগ্ন মূর্তিখানি !
একথা বুঝিব কবে
-
ধানভানা ছাড়া কোন
উঁচু মানে থাকেনা ঢেকির রবে ।
যতীন্দ্রনাথ তাই
বাক্চাতুরি, ভাববিলাস, ক্লীব আধ্যাত্মিকতাকে
ধিক্কার দিয়েছেন । ইংরেজ কবি ডনের কবিতায় যে Metaphysical তত্ত্ব রয়েছে
তা যতীন্দ্রনাথের উপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে । যতীন্দ্রনাথ সেই তত্ত্বের সাহায্যে একটি আত্মতত্ত্বে পৌঁছেছেন । কবির কাব্যধর্মের দৃষ্টি প্রতিভাত হয় তাঁর কাব্যের নামকরণে । কবির কাব্যগ্রন্থ গুলি - পরীচিকা (১৯২৩), মরুশিখা (১৯২৭), মরুমায়া (১৯৩০), সায়াম্ (১৯৪০), ত্রিযম (১৯৪৮) ও নিশান্তিকা (১৯৫৭) । কবির চয়নিকা কাব্যের নাম, অনুপূর্বা (১৯৪৬)
।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comments. Please visit again.