মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) |
রবীন্দ্র-পরবর্তী কবিদের মধ্যে অন্যতম মোহিতলাল
মজুমদার । কবি
রবীন্দ্র-উত্তরণের যে পথের সন্ধান দিয়েছিলেন, সেই প্রদর্শিত
পথে কাব্য রচনা করেছেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু,
বিষ্ণু দে (প্রথম দিকে ) এবং পরবর্তিকালে অনেকে । কল্লোল
ও কালিকলম (পত্রিকা )-কে অবলম্বন করে রবীন্দ্র-উত্তরণের যে প্লাবন শুরু হয়েছিল তাতে
মোহিতলালের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় । প্রথম
দিকে কবির কাব্যের মধ্যে ভোগবাদের রূপপিপাসা লক্ষ্য করা য়ায় । সেই
সময় এই দেহাশ্রিত ভোগবাদ তথা রূপপিপাসা অবলম্বন করেই রবীন্দ্রোত্তর কাব্যের দিক্দর্শনের
প্রচেষ্ঠা চলে । তবে
শেষের দিকে এই রূপপিপাসার সঙ্গে বৈষ্ণব, তান্ত্রিক
ও বেদান্তের জীবনদর্শনের কিছুটা সমন্বয় করে বলিষ্ঠ ক্লাসিকাল ভঙ্গিতে কবিতা রচনা করেছেন
। প্রথম
দিকে তাঁর কাব্যে রবীন্দ্রনাথ ও সত্যেন্দ্রনাথের প্রভাব যথেষ্ট ছিল,
ক্রমে কবি তা অতিক্রম করেছিলেন । বস্তুত
মোহিতলালের ক্লাসিকাল গঠনশিল্প, সুবিন্যস্ত ভাবসজ্জা,
জীবনসত্য প্রকাশের বলিষ্ট ভঙ্গি ও ছন্দের ভাবনা নিয়ন্ত্রিত, যা সমকালীন অন্যান্য কবির আঙ্গিক শিথিলতা, ভাবের অজস্র
উৎসার ও ছন্দোসিলাসের আতিশয্যের এক অসাধারণ ব্যতিক্রম ও মননদৃপ্ত প্রতিবাদ । পৃথিবীর
প্রতি কতকটা নাস্তিক্যবাদী ধারণা প্রকাশ করেও কবি সর্বত্রই জীবনবাদী,
কবি দেহাশ্রিত প্রেমকে স্বীকার করেও বৈষ্ণব-শাক্ত সাধনার তত্তটি গ্রহণ
করতে পেরেছিলেন ।
কবি
রোমান্টিক দৃষ্টিতে বলিষ্ঠ জীবনবোধকে আশ্রয় করে ক্লাসিকাল বাক্নির্মিতি ও নিটোল ছন্দোপ্রকরণে
অনন্য-সাধারণ কবিপ্রাণের পরিচয় রেখেছেন ।
মোহিতলালের
কাব্যগ্রন্থগুলি ছন্দচতুর্দশী (১৯১৫), স্বপনপসারী
(১৯২২), বিস্মরণী (১৯২৭), স্মরগরল (১৯৩৬),
এবং হেমন্ত গোধূলি (১৯৪১) ।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comments. Please visit again.