Welcome to my Blog

Monday, 8 July 2013

কবিগান /kobigan of Bengale

kobiganer asar
                   ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ এর মধ্যে কবি গানের বিকাশ ঘটেছিল সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে বলা য়ায়, ভারতচন্দ্র রায় গুনাকরের মৃত্যুর (১৭৬০) পর থেকে ঈশ্বরগুপ্তের মৃত্যু পর্যন্ত (১৮৫৯) একশ বছর ধরে কলকাতা ও পার্শ্বসর্তী অঞ্চলে যে নাগরিক লোকসঙ্গীতের বিকাশ হয়েছিল তাই সাধারণ ভাবে কবিগান হিসাবে পরিচিত কবিগানের গায়কেরা পরিচিতি লাভ করে কবিওয়ালা বা কবিয়াল হিসাবে কবিগান আসলে ছিল কবিয়ালদের গানের লড়াই কবিয়ালরা দুদলে বিভক্ত হয়ে আসরে দাঁড়িয়ে বিশেষ রীতি পদ্ধতি অবলম্বন করে গান গাইতেন এগুলি মহড়া, চিতেন, পরচিতেন, মেলতা, ফুকা, মাদ ইত্যাদি নামে পরিচিত কবিগান নামটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হলেও তরজা, খেউড়, আখড়াই, হাফাখড়াই, পাঁচালি প্রভৃতি হল কবিগানের নানাবিধ আঙ্গিক কবিতা হিসাবে এগুলিকে মোটামুটি এক শ্রেণীভুক্ত বলে মনে করা হয় তবে এই আঙ্গিকগত বৈচিত্র্যের মূলে কাজ করেছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষ প্রভাব কবিগান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল অর্ধশিক্ষিত, কোথাও বা অশিক্ষিত গায়কের গান কবিগানের আঙ্গিকগত বৈচিত্র যেমন লক্ষ্য করা য়ায়, তেমনি এর বিষয় গত বৈচিত্র্যও কম নয় নানা ধরনের পৌরাণিক ও ভক্তিমূলক বিষয় নিয়ে যেমন কবিগানে বিতর্ক হত, তেমন নানা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও কবিগানের লড়াইয়ে প্রবেশ করত এই সমস্ত বিষয় গুলির মধ্যেই কবিয়ালদের ভাষানৈপুণ্য, বাকচাতুর্য ও বুদ্ধিদীপ্তির প্রকাশ ঘটত তবে এই বাকচাতুর্য ও ভাষানৈপুণ্য স্থুলতা বর্জিত ছিল না আসরে দাঁড়িয়ে যাঁরা প্রয়োজন মতো গান রচনা করতে পারতেন তাঁদের বলা হত দাঁড়কবি


                কবিগানের চারটি উপচ্ছেদ লক্ষ্য করা য়ায়, যেমন - ভবানী বিষয়ক, সখী সংবাদ, বিরহ ও খেউড় দুদল কবিয়াল আসরে অবতীর্ণ হয়ে পর্যায়ক্রমে চারটি স্তরে সঙ্গীত প্রতিযোগিতা ভাগ করে নিতেন ভবানী অথাৎ শ্যামা বিষয়ক, সখী সংবাদ ও বিরহ বৈষ্ণব পদাবলীর ঢঙে রচিত হতো খেউড় গান যা অনুষ্ঠানের শেষে গাইতে হত তার অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল অশ্লীল রঙ্গ কৌতুক ও ব্যক্তিগত গালি-গালাজ খিউড় তুলনামূলক ভাবে সহনীয় হলেও, কাঁচা খেউড় ছিল অতিরিক্ত অশ্লীল ও কুরুচিকর কবিয়ালরা কিন্তু পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে গান বাঁধতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তাঁদের বেতনভুক বাঁধনদার ছিলেন যারা আসরে বসেই গান বেঁধে দিতেন এবং কবিয়ালরা সেইগান সুরে-তালে গাইতেন পুরাতন কবিয়ালদের বিশেষ কোনো পরিচয় পাওয়া য়ায়নি সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন কবি ঈশ্বরগুপ্ত, তিনি 'সংবাদ প্রভাকর'এ বহু কবিয়ালদের পরিচয় ও কবিগানের নমুনা মুদ্রিত করেছেন তানাহলে এই কবিয়ালরা স্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যেতেন ভবানীবেনে, রাসু, নৃসিংহ, হরণঠাকুর, নিতাই বৈরাগী, রামবসু,ভোলা ময়রা, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী প্রভৃতি কবিয়াল উনিশ শতকে কলকাতা ও শহরতলীকে মাতিয়ে রেখেছিলেন এরা প্রায় সকলেই কমবেশী প্রতিভাবান ছিলেন তারপর উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সাহিত্য, সমাজ, শিক্ষাদীক্ষা, ধর্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে নবযুগের আবির্ভাব হলে নাগরিক কবিগান ক্রমশ গ্রামীণ সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে ওঠে বর্তমানে কবিগান যতই বিলুপ্ত হয়ে যাক না কেন এর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comments. Please visit again.