গোপন কথাটি
কেশব মেট্যা
নিবিড় হয়ে জমল বুকে
মেঘ / আহত হাত খোলস খোঁজে মুখে
দিগন্তে আজ কান্না
পাথর বাঁশি / লতার মত জীবন জড়ালে কবে
আজ পৃথিবীময় অভিমানে
গড়েছে আমার অবয়ব / শিরায় শিরায় পুষে নিয়েছ অযুত ঘৃনা
সীমাহীন ভেসে গেলে
জেনো চাঁদ হাসে কূলে / বরং চূর্ণ হোক অতি মগ্ন অপেক্ষাগুলি
অসময়ে থামালে কেন
বাঁশি / নিঃস্ব হতে হতে মেখেছি অনিশ্চিত নক্ষত্র আলো
জেনেছ তো নিশ্চিত
বলে কিছু হয় না / বরং দু-এক গলি রবিঠাকুর শোনাও
কষ্টে এখন কান্না
আসে না চোখে / শোকে আর আগুন জ্বলে কই
পাষাণ হয়ে খুঁজেছি
এমন পাথর / স্পর্শ মেঘেই আগুন জ্বলুক বুকে
অনন্ত শোকের পর মাথার
উপর এসো গাছ / পিতার মতো দাও ছায়া
এখনই তো চিনে নিতে
হয় বর্ণপরিচয় / রন্ধ্রে রন্ধ্রে দাও তোমার শিকড় চেতনা
অনেক ঢেউয়ের পর জ্বলে
উঠল চিতা / পুড়ে যাচ্ছো ধিকিধিকি একা একাকি
আমাদেরও পুড়ে গেছে
কত মোমবাতি রাত / বিষাদ-জল ভেঙে জাগছে মায়াময় স্মৃতি
অনেক স্রোত ভেঙে কাটিয়েছ
মায়া / ফিরিয়েছ মুখ ফিলিয়েছ হাত
অনেক চলার পর দীর্ঘ
হল ছায়া / বিগত শোক মুছে ফেলে কান্নার দাগ
এরপর ছন্দপতন হোক
খুব জোরে / দু'একটা দেওয়াল জেগে উঠুক আরও
মনহীন মনোযোগে টুকরো
হয় ছবি / পাতাল থেকেই তীব্র উঠুক সম্মোহিত সিঁড়ি
রাস্তা নেই বলে রাগে
অনশনে বসেছিল যে / সে-ই আবার রাস্তা কেটেছে অন্য রাগে
রাগের রাস্তায় হাঁটতে
হাঁটতে কে কবে ক্লান্ত হবে / সেই রাগে অন্য রাস্তায় আগামী চাঁদ ও নদী
এরপর কীভাবে দাঁড়াব
বলো পত্রচ্যুত বৃক্ষ / এত রক্ত মেখে কীভাবে হাঁটি মধ্যমেধার চাঁদ
দীর্ঘ দীর্ঘ অতি দীর্ঘ
বিরল হল পার / ডানামেঘ আড়াল দিও রেখে যাব সোনার পালক
এখনও কি রাত জাগো
স্যারিডন ছুঁয়ে / ঝিমঝিম জমে উঠে বেদনার জল
কবে কে পাশে ছিল কাঁপে
তার মুখ / অতীত আবেশে কাটে গুঁড়ো গুঁড়ো দিন
বিষন্ন পালক ছেড়ে
উড়ে যাক পাখি / ঠোঁটে করে নিয়ে যাও পয়মন্ত সুখ
দেহ ঘিরে বেড়ে উঠুক
লতাগুল্ম আরও / অতৃপ্ত পাথরেই জন্ম হোক পুনর্বার
ক্ষীণ হয়ে আসছে তোমার
যন্ত্রণা / আমিও কেঁপেছি ঘনঘন রাতে
দুর্বিষহ দিনগুলি
যায় না কখনো দ্রুত / এস. এম. এস. ডানায় আদর পাঠাওনি কতকাল
মুখ থুবড়ে পড়ল মোমবাতি
/ মৃত্তিকা কাঁপে মৃদুমন্দ অভিলাষে
হারানো দুপুর খোঁজে
ব্যর্থ পোড়াবাঁশি / আমি তোতার হলদেটে প্রিয় খাতা
পথ হারাবে কেন দিনান্তে
/ পথ-ই হারে তোমার কাছে জানি
সামনে চলার মন্ত্র
পুষেছ বুকে / একলা বাঁচার আগুনকথা শোনাও
জীবনে জমাট মেঘ মুছে
দেবে কে / আকাশে সন্ধ্যাকথা লিখব কবে হায়
দিন যায় রাত যায় রোদে
রোদে বেলা কত / অকাল বর্ষণে ধুয়ে গেছে মধ্যবিত্ত ঘুম
এখন বীণা বাজে কার
দেহে / রাত্রি গভীরতর হলে মন চমকায়
বিদ্যুৎ খেলে যায়
নাভির গুহায় / এইতো সময় নিবিড় হোক অন্ধ অন্ধকার
বিলম্বিত প্রহর গুনছে
দুটি চোখ / কখন ভেসে যাবে ঢেউয়ে নাভিতটরেখা
অন্তহীন জানালায় সন্ধ্যা
সহসা স্থির / হবে হবে রিমঝিম ওষ্ঠ মেঘে
কত গোপন শব্দ বুনেছ
সারা দেহে / মন্থর মায়াবী ছায়া ভেসে যায় চোখে
ছুঁয়েই দিলাম অনুমতিহীন
অতৃপ্ত অভিসারে / এবার কী হবে বলো এই ঝমঝম বৃষ্টি রাতে
ঝিমঝিম করে উঠল স্মৃতি
/ আমার তখন সেতুভাঙা স্বপ্নঘোরে
নির্ঘুম চোখ পাথর-শোকে
প্রহর প্রহর / আগুন আনতে গাছের কাছে যাই
মাঝ বিকেলের আলো জানিয়ে
দিল আজ / কীভাবে হঠাৎ পিওন জাদুকর হয়ে যায়
একুশতম চিঠির উত্তর
এল সিন্দুক চাবি / খুলে যায় বিনুনি কার গুনগুন শরিকি ছাদে
এই তো কেমন হুস্ উড়ে
যায় জীবন / এই তো নিঝুম মৃত্যু পুষেছি বুকে
তাথৈ তাথৈ কান্না
নিল চোখ / মায়া মাখলো আক্ষেপ মন নদী
ছুঁয়েছি সময় অবিরল
আন্দোলনে / শব্দেরা ঝরিয়েছে অঝোর মায়া
তোমার বিবর্ণ মুখ
ঘিরে আমার পরাজয় / দেওয়াল জুড়ে কান্নার কথা আঁকা
দীপ নিভে গেল সন্ধ্যা
বাতাসে / তবে কেন জেগে থাকি এ মোহবেলায়
এখনই তো পুড়ে যেতে
হয় ধিকিধিকি / যদি সোনা হতে পারি পরপারে ।।