Welcome to my Blog

Sunday 21 July 2013

গোপন কথাটি/Gopon kothati

গোপন কথাটি
কেশব মেট্যা

নিবিড় হয়ে জমল বুকে মেঘ / আহত হাত খোলস খোঁজে মুখে
দিগন্তে আজ কান্না পাথর বাঁশি / লতার মত জীবন জড়ালে কবে

আজ পৃথিবীময় অভিমানে গড়েছে আমার অবয়ব / শিরায় শিরায় পুষে নিয়েছ অযুত ঘৃনা
সীমাহীন ভেসে গেলে জেনো চাঁদ হাসে কূলে / বরং চূর্ণ হোক অতি মগ্ন অপেক্ষাগুলি

অসময়ে থামালে কেন বাঁশি / নিঃস্ব হতে হতে মেখেছি অনিশ্চিত নক্ষত্র আলো
জেনেছ তো নিশ্চিত বলে কিছু হয় না / বরং দু-এক গলি রবিঠাকুর শোনাও

কষ্টে এখন কান্না আসে না চোখে / শোকে আর আগুন জ্বলে কই
পাষাণ হয়ে খুঁজেছি এমন পাথর / স্পর্শ মেঘেই আগুন জ্বলুক বুকে

অনন্ত শোকের পর মাথার উপর এসো গাছ / পিতার মতো দাও ছায়া
এখনই তো চিনে নিতে হয় বর্ণপরিচয় / রন্ধ্রে রন্ধ্রে দাও তোমার শিকড় চেতনা

অনেক ঢেউয়ের পর জ্বলে উঠল চিতা / পুড়ে যাচ্ছো ধিকিধিকি একা একাকি
আমাদেরও পুড়ে গেছে কত মোমবাতি রাত / বিষাদ-জল ভেঙে জাগছে মায়াময় স্মৃতি

অনেক স্রোত ভেঙে কাটিয়েছ মায়া / ফিরিয়েছ মুখ ফিলিয়েছ হাত
অনেক চলার পর দীর্ঘ হল ছায়া / বিগত শোক মুছে ফেলে কান্নার দাগ

এরপর ছন্দপতন হোক খুব জোরে / দু'একটা দেওয়াল জেগে উঠুক আরও
মনহীন মনোযোগে টুকরো হয় ছবি / পাতাল থেকেই তীব্র উঠুক সম্মোহিত সিঁড়ি

রাস্তা নেই বলে রাগে অনশনে বসেছিল যে / সে-ই আবার রাস্তা কেটেছে অন্য রাগে
রাগের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কে কবে ক্লান্ত হবে / সেই রাগে অন্য রাস্তায় আগামী চাঁদ ও নদী

এরপর কীভাবে দাঁড়াব বলো পত্রচ্যুত বৃক্ষ / এত রক্ত মেখে কীভাবে হাঁটি মধ্যমেধার চাঁদ
দীর্ঘ দীর্ঘ অতি দীর্ঘ বিরল হল পার / ডানামেঘ আড়াল দিও রেখে যাব সোনার পালক

এখনও কি রাত জাগো স্যারিডন ছুঁয়ে / ঝিমঝিম জমে উঠে বেদনার জল
কবে কে পাশে ছিল কাঁপে তার মুখ / অতীত আবেশে কাটে গুঁড়ো গুঁড়ো দিন

বিষন্ন পালক ছেড়ে উড়ে যাক পাখি / ঠোঁটে করে নিয়ে যাও পয়মন্ত সুখ
দেহ ঘিরে বেড়ে উঠুক লতাগুল্ম আরও / অতৃপ্ত পাথরেই জন্ম হোক পুনর্বার

ক্ষীণ হয়ে আসছে তোমার যন্ত্রণা / আমিও কেঁপেছি ঘনঘন রাতে
দুর্বিষহ দিনগুলি যায় না কখনো দ্রুত / এস. এম. এস. ডানায় আদর পাঠাওনি কতকাল

মুখ থুবড়ে পড়ল মোমবাতি / মৃত্তিকা কাঁপে মৃদুমন্দ অভিলাষে
হারানো দুপুর খোঁজে ব্যর্থ পোড়াবাঁশি / আমি তোতার হলদেটে প্রিয় খাতা

পথ হারাবে কেন দিনান্তে / পথ-ই হারে তোমার কাছে জানি
সামনে চলার মন্ত্র পুষেছ বুকে / একলা বাঁচার আগুনকথা শোনাও

জীবনে জমাট মেঘ মুছে দেবে কে / আকাশে সন্ধ্যাকথা লিখব কবে হায়
দিন যায় রাত যায় রোদে রোদে বেলা কত / অকাল বর্ষণে ধুয়ে গেছে মধ্যবিত্ত ঘুম

এখন বীণা বাজে কার দেহে / রাত্রি গভীরতর হলে মন চমকায়
বিদ্যুৎ খেলে যায় নাভির গুহায় / এইতো সময় নিবিড় হোক অন্ধ অন্ধকার

বিলম্বিত প্রহর গুনছে দুটি চোখ / কখন ভেসে যাবে ঢেউয়ে নাভিতটরেখা
অন্তহীন জানালায় সন্ধ্যা সহসা স্থির / হবে হবে রিমঝিম ওষ্ঠ মেঘে

কত গোপন শব্দ বুনেছ সারা দেহে / মন্থর মায়াবী ছায়া ভেসে যায় চোখে
ছুঁয়েই দিলাম অনুমতিহীন অতৃপ্ত অভিসারে / এবার কী হবে বলো এই ঝমঝম বৃষ্টি রাতে

ঝিমঝিম করে উঠল স্মৃতি / আমার তখন সেতুভাঙা স্বপ্নঘোরে
নির্ঘুম চোখ পাথর-শোকে প্রহর প্রহর / আগুন আনতে গাছের কাছে যাই

মাঝ বিকেলের আলো জানিয়ে দিল আজ / কীভাবে হঠাৎ পিওন জাদুকর হয়ে যায়
একুশতম চিঠির উত্তর এল সিন্দুক চাবি / খুলে যায় বিনুনি কার গুনগুন শরিকি ছাদে

এই তো কেমন হুস্ উড়ে যায় জীবন / এই তো নিঝুম মৃত্যু পুষেছি বুকে
তাথৈ তাথৈ কান্না নিল চোখ / মায়া মাখলো আক্ষেপ মন নদী

ছুঁয়েছি সময় অবিরল আন্দোলনে / শব্দেরা ঝরিয়েছে অঝোর মায়া
তোমার বিবর্ণ মুখ ঘিরে আমার পরাজয় / দেওয়াল জুড়ে কান্নার কথা আঁকা

দীপ নিভে গেল সন্ধ্যা বাতাসে / তবে কেন জেগে থাকি এ মোহবেলায়
এখনই তো পুড়ে যেতে হয় ধিকিধিকি / যদি সোনা হতে পারি পরপারে ।। 

Friday 19 July 2013

অমৃতলাল বসু / Amritalal Basu

অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯)
                 কলিকাতায় সাধারণ রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সংযুক্ত নাট্যকার হিসাবে গিরিশচন্দ্র ঘোষের পরই উল্লেখযোগ্য অমৃতলাল বসু অমৃতলাল বসু হাস্যরসাত্মক ব্যঙ্গ ও লঘু নাটক রচনায় দক্ষতা অর্জন করেণ অমৃতলাল বসুর প্রহসনগুলি প্রধানতঃ পরানুকরী সমাজের প্রতি আঘাতের বিষয় নিয়ে পরিকল্পিত অমৃতলালের উল্লেখযোগ্য প্রহসন গুলি হল - হীরকচূর্ণ (১২৮২ বঙ্গ), বিবাহ বিভ্রাট (১২৯১ বঙ্গ), বাবু (১৩০০ বঙ্গ), একাকার (১৩০১ বঙ্গ), গ্রাম্য বিভ্রাট (১৩০৪ বঙ্গ), অবতার (১৩০৮ বঙ্গ), খাসদখল (১৩১৮ বঙ্গ)  

                 অমৃতলাল প্রহসন রচয়িতার নানাগুণে বিভূষিত ছিলেন, কিন্তু তিনি আগামী যুগের বিরোধিতা করে নিজেকে সল্পস্থায়ী করেছেন অমৃতলাল বসু যথার্থ গভীরভাবে বিবেচনা করে কোন নাটক রচনা করেন নি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কতকগুলি বাঁধাধরা ধারণায় তিনি চলেছেন উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তাঁরনাটকের ব্রাহ্মণ চরিত্রগুলির উপর তিনি সুবিচার করেন নি অধিকাংশ স্থলেই তারা লোভী উদরসর্বস্ব তবে আসর জমাবার পক্ষে তাঁর নাটকের যথেষ্ট দক্ষতা ছিল সেই জন্যেই সমকালে তাঁর নাটকগুলি যথেষ্ট সমাদর লাভ করে ।



তথ্য উৎস্য :-  বাংলা সাহিত্য (মণীন্দ্রকুমার ঘোষ ও তারাপদ রাহা ),সাহিত্য টীকা (মুখোপাধ্যায় ও ভট্টাচার্য ).  

Thursday 18 July 2013

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়/Dwijendralal Roy

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)
                দ্বিজেন্দ্রলাল কবি হলেও, নাটক রচয়িতারূপে তার খ্যাতি কম নয় তিনি সাধারণ রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন না অথচ বাংলা নাট্যসাহিত্যকে যথার্থ আদর্শে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ শুরু করেছিলেন বাংলা নাটকের করুণ ভক্তিরস ও লঘু ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরসে যখন দর্শক-সাধারণ বিভোর সেই সময় দ্বিজেন্দ্রলাল পাশ্চাত্য নাট্যাদর্শে বিশেষ করে সেক্সপীয়রের নাট্যাদর্শে নাটক রচনায় ব্রতী হন দেশপ্রেমমূলক এবং ঐতিহাসিক নাটকেও তিনি এই আদর্শ মেনে চলেছেন নাটকে অতিলৌকিকতা, ভক্তিরসের আতিশয্য প্রভৃতি উত্তরণ তখন প্রায় অসাধ্য ছিল বললেই চলে সেই সময় দ্বিজেন্দ্রলাল চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দের মাধ্যমে নাটকের পরিণতির পথটি গ্রহণ করলেন এই প্রচেষ্ঠা দ্বিজেন্দ্রলালের মৌলিক আবিষ্কার বলা চলে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক গুলি হল  ------


  • পৌরাণিক নাটক :-  পাষাণী (১৯০০), সীতা (১৯০৮), ভীষ্ম (১৯১৪).


  • ঐতাহাসাশ্রিত রোমান্টিক নাট্যকাব্য :- তারাবাঈ (১৯০৩), সোরাব রুস্তম (১৯০৮).

  • ঐতিহাসিক নাটক :-  প্রতাপসিংহ (১৯০৫), দুর্গাদাস (১৯০৫), নূরজাহান (১৯০৮), মেবার পতন (১৯০৮), সাজাহান (১৯০৯), চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১), সিংহল বিজয় (১৯১৫).

  • সামাজিক নাটক :- পরপারে (১৯১২), বঙ্গনারী (১৯১৬).

  • প্রহসন :- কল্কি অবতার (১৮৯৫), বিরহ (১৮৯৭), ত্রাহস্পর্শ (১৯০০), প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২), পুনর্জন্ম (১৯১১), আনন্দ বিদায় (১৯১২).



তথ্য উৎস্য :-  বাংলা সাহিত্য (মণীন্দ্রকুমার ঘোষ ও তারাপদ রাহা ),সাহিত্য টীকা (মুখোপাধ্যায় ও ভট্টাচার্য ).  

Tuesday 16 July 2013

সিগারেট /sigaret

সিগারেট
সুকান্ত ভট্টাচার্য


আমরা সিগারেট / তোমরা আমাদের বাঁচতে দাও না কেন ?

আমাদের কেন নিঃশেষ করো পুড়িয়ে ? / কেন এত স্বল্প-স্থায়ী আমাদের আয়ু ?

মানবতার কোন্ দোহাই তোমরা পাড়বে ? / আমাদের দাম বড় কম এই পৃথিবীতে

তাই কি তোমরা আমাদের শোষণ করো ? / বিলাসের সামগ্রী হিসাবে ফেলো পুড়িয়ে ?

তোমাদের শোষণের টানে আমরা ছাই হই / তোমরা নিবিড় হও আমাদের উত্তাপে

তোমাদের আরাম : আমাদের মৃত্যু / এমনি ক'রে চলবে আর কত কাল ?

আর কতকাল আমরা এমনি নিঃশব্দে ডাকব / আয়ু-হরণকারী তিল তিল অপঘাতকে ?

দিন আর রাত্রি - রাত্রি আর দিন ! / তোমরা আমাদের শোষণ করছ সর্বক্ষণ -

আমাদের বিশ্রাম নেই, মজুরি নেই - / নেই কোন অল্প-মাত্রার ছুটি

তাই, আর নয় ; / আর আমরা বন্দী থাকব না / কৌটোয় আর প্যাকেটে,

 আঙুলে আর পকেটে ; / সোনা-বাঁধানো 'কেসে' আমাদের নিঃশ্বাস হবে না রুদ্ধ

আমরা বেরিয়ে পড়ব / সবাই একজোটে, একত্রে - / তারপর তোমাদের অসতর্ক মুহূর্তে

জ্বলন্ত আমরা ছিট্‌কে পড়ব তোমাদের হাত থেকে / বিছানায় অথবা কাপড়ে ;

নিঃশব্দে হঠাৎ জ্বলে উঠে / বিড়িসুদ্ধ পুড়িয়ে মারব তোমাদের,

যোমন করে তোমরা আমাদের পুড়িয়ে মেরেছ এতকাল ।।

Monday 15 July 2013

সিঁড়ি/Siri

সিঁড়ি
সুকান্ত ভট্টাচার্য


আমরা সিঁড়ি

তোমরা আমাদের মাড়িয়ে

প্রতিদিন অনেক উঁচুতে উঠে যাও,

তারপর ফিরেও তাকাও না পিছনের দিকে ;

তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক

পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন

তোমরাও তা জানো,

তাই কার্পেটে মুড়ে রাখতে চাও আমাদের বুকের ক্ষত,

ঢেকে রাখতে চাও তোমাদের অত্যাচারের চিহ্নকে

চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে

তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি

তবু আমরা জানি,

চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে

চাপা থাকবে না

আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত

আর সম্রাট হুমায়ুনের মতো

একদিন তোমাদেরও হতে পারে পদস্খলন ।।

Friday 12 July 2013

আঠারো বছর বয়স/Atharo bachhor boyas

আঠারো বছর বয়স
সুকান্ত ভট্টাচার্য


আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ  /  স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,

আঠারো বছর বয়সেই অহরহ  /  বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় উঁকি

আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়  /  পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,

এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয় -  /  আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা ।

এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য  /  বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,

প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য  /  সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে ।

আঠারো বছর বয়স ভয়ঙ্কর  /  তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা, 

এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর  / এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা ।

আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার  /  পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,

দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার  /  ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ ।

আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে  /  অবিশ্রান্ত ; একে একে হয় জড়ো,

এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে  /  এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো ।

তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,  /  এ বয়স বাঁচে দুর্যোগ আর ঝড়ে,

বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী  /  এ বয়স তবু নতুন কিছু তে করে ।

ও বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়  /  পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,


এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয় -  /  এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে ।।

Thursday 11 July 2013

হে মহাজীবন/He mahajeeban

হে মহাজীবন
সুকান্ত ভট্টাচার্য


হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়

এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,

পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক

গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো !

প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা -

কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় :

পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্‌সানো রুটি ।।

Wednesday 10 July 2013

দেশলাই কাঠি/ Deshlai kathi

দেশলাই কাঠি
সুকান্ত ভট্টাচার্য


আমি একটি ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি  /  এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না :

তবু জেনো  /  মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ -

বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস ;  / আমি একটি দেশলাইয়ের কাঠি

মন আছে সেদিন হুলুস্থুল বেধেছিল ?  /   ঘরের কোণে জ্বলে উঠেছিল আগুন -

আমাকে অবজ্ঞাভরে না-নিভিয়ে ছুঁড়ে ফেলায় !  /  কত ঘরকে দিয়েছি পুড়িয়ে,

কত প্রাসাদকে করেছি ধুলিসাৎ ;  /  আমি একই - ছোট্ট একটা দেশলাই কাঠি

এমনি বহু নগর, বহু রাজ্যকে দিতে পারি ছারখার করে  /  তবেও অবজ্ঞা করবে আমাদের ?

মনে নেই ? এই সেদিন -  /  আমরা সবাই জ্বলে উঠেছিলাম একই বাক্সে ;

চমকে উঠেছিলে -  /  আমরা শুনেছিলাম তোমাদের বিবর্ণ মুখের আর্তনাদ

আমাদের কী অসীম শক্তি  /  তা তো অনুভব করেছ বারংবার ;

তবু কেন বোঝ না,  /  আমরা বন্দী থাকব না তোমাদের পকেটে পকেটে,

আমরা বেরিয়ে পড়ব, আমরা ছড়িয়ে পড়ব  /  শহরে, গঞ্জে, গ্রামে - দিগন্তে থেকে দিগন্তে

আমরা বারবার জ্বলি, নিতান্ত অবহেলায় -  /  তা তো তোমরা জানোই !

কিন্তু তোমরা তো জান না :  /  কবে আমরা জ্বলে উঠব -

সবাই - শেষবারের মতো !

Tuesday 9 July 2013

বুদ্ধদেব বসু/Buddhadeb Basu

 
বুদ্ধদেব বসু
(৩০শে নভেম্বর ১৯০৮ - ১৮ ই মার্চ ১৯৭৪)
            কল্লোল যুগের অন্যতম কবি ছিলেন বুদ্ধদেব বসু কিন্তু কবি সেই যুগের নগ্ন সৌন্দর্যের জন্য যতই 'যৌন আকাঙ্ক্ষার তীব্রতার অভিব্যক্তি' করুক না কেন তা তাঁর সর্বস্ব নয় কবির একটি স্বচ্ছ-শুভ্র প্রেমিক মনের অবস্থান অল্প আয়েসেই তাঁর কবিতায় ধরা পড়ে কবির এই অনুভূতি তাঁর অপূর্ব বাক্‌শিল্পবিন্যাসে স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে এই ভাষামাধুরর্য তাঁর কাব্যের তো বটেই, প্রবন্ধেরও একটা মহৎ গুণ কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ গুলি ---- 

              মর্মবাণী (১৯২৪), বন্দীর বন্দনা (১৯৩০), কঙ্কাবতী (১৯৩৭), পরিক্রমা (১৯৩৮), নতুনপাতা (১৯৪০), দময়ন্তী (১৯৪২), ২২শে শ্রাবণ (১৯৪২), রূপান্তর (১৯৪৪), দ্রৌপদীর শাড়ি (১৯৪৮), শীতের প্রার্থনা বসন্তের উত্তর (১৯৫৫), পৃথিবীর পথে, যে আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮), মরচে পড়া পেরেকের গান (১৯৬৬), একদিন চিরদিন (১৯৭১), সংক্রান্তি;প্রায়শ্চিত্ত;ইক্কাকুসেন্নিন (১৯৭৩)  

          কবি কিছু প্রাচ্য-প্রতীচ্যের কবিতার অনুবাদ করেছেন এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে সেইখানেই যেখানে কবির সঙ্গে তাঁর সগোত্রতা

Monday 8 July 2013

একটি মোরগের কাহিনী/Ekti moroger kahini

একটি মোরগের কাহিনী
সুকান্ত ভট্টাচার্য

একটি মোরগ হঠাৎ আশ্রয় পেয়ে গেল  /  বিরাট প্রাসাদের ছোট্ট এক কোণে,

ভাঙা প্যাকিং বাক্সের গাদায় -  /  আরো দু'তিনটি মুরগির সঙ্গে

আশ্রয় যদিও মিলল,  /  উপযুক্ত আহার মিলল না

সুতীক্ষ্ণ চিৎকারে প্রতিবাদ জানায়ে  /  গলা ফাটায় সেই মোরগ

ভোর থেকে সন্ধ্যে পর্যুন্ত -  /  তবুও সহানুভূতি জানাল না সেই বিরাট শক্ত ইমারত

তারপরে শুরু হল তার আঁস্তাকুড়ে আনাগোনা :  /  আশ্চর্য ! সেখানে প্রতিদিন মিলতে লাগল

ফেলে দেওয়া ভাত-রুটির চমৎকার প্রচুর খাবার   / তারপর এক সময় আঁস্তাকুড়েও এল অংশীদার -

ময়লা ছেঁড়া ন্যাকড়া পরা দু'তিনটে মানুষ ;  /  কাজেই দুর্বলতর মোরগের খাবার গেল বন্ধ হয়ে

খাবার ! খাবার ! খানিকটা খাবার !  /  অসহায় মোরগ খাবারের সন্ধানে

বার বার চেষ্ঠা ক'রল প্রাসাদে ঢুকতে,  /  প্রত্যেকবারই তাড়া খেল প্রচণ্ড

ছোট্ট মোরগ ঘাড় উঁচু করে স্বপ্ন দেখে -  /  প্রাসাদের ভেতর রাশি রাশি খাবার !

তারপর সত্যিই সে একদিন প্রাসাদে ঢুকতে পেল,  /  একেবারে সোজা চলে এল

ধবধবে সাদা দামী কাপড়ে ঢাকা খাবার টেবিলে ;

অবশ্য খাবার খেতে নয় -  /  খাবার হিসাবে ।।